History

অবস্থান

প্রখ্যাত লেখক মীর মোশাররফ হোসেনের জন্মভূমি রাজবাড়ী জেলার প্রানকেন্দ্র সজ্জনকান্দা এলাকায় রাজবাড়ী জেলার একমাত্র কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজবাড়ী সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ অবস্থিত। উত্তরপার্শ্বে রাজবাড়ী আধুনিক সদর হাসপাতাল, রাজবাড়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী মহিলা কলেজ অবস্থিত। দক্ষিন পার্শ্বে আবুল হোসেন ডিগ্রি কলেজ, পশ্চিমে জনস্বার্থ প্রকৌশল অধিদপ্তর, সিভিল সার্জন কার্যালয় অবস্থিত এবং পূর্বদিকে দুইটি নিু মাধ্যমিক স্কুল অবস্থিত। রাজধানী ঢাকা শহর থেকে বাসযোগে পাটুরিযা -দৌলতদিয়া পার হয়ে সহজেই এখানে আসা যায়।

আয়তনঃ

চুর্তদিকে প্রাচীর বেষ্টিত ৪.১৬ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত।

অবকাঠামো

দোতলা একাডেমিক ভবন যাহার প্রতি তলায় চারটি করিয়া রুম রহিয়াছে। ছাত্রছাত্রীদের শ্রেনী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ০৪ রুম বিশিষ্ট ০১ টি টিনশেড সেমি পাকা বিল্ডিং, ০২ টি বিশাল ওয়ার্কশপ (পাকা দালান), ০১ টি বিজ্ঞানাগার, ০৪ রুম বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন, ০১ টি লাইব্রেরী ও একটি প্রধান স্টোর রহিয়াছে। ইহা ছাড়াও অত্র প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় টয়লেট, বাথরুম নির্মান করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে একটি আবাসিক ষ্ট্যাফ কোয়াটার (০৪ ফ্লাট বিশিষ্ট) এবং একটি পরিত্যাক্ত সুপারিনটেনডেন্ট কোয়াটার রহিয়াছে।

পাঠদান পদ্ধতি

অত্র প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক বৃন্দ উচ্চ শিক্ষিত এবং বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষন প্রাপ্ত। কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের প্রণীত প্রবিধান অনুযায়ী শ্রেনী কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কারিগরী শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষক কর্র্তৃক প্রস্তুুতকৃত মডেল ও অন্যান্য উপকরনাদির সমন্বয়ে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ক্লাশ পরিচালনা করা হয়। অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছাত্রছাত্রীদের মানোন্নয়ের জন্য সপ্তাহে ০১ দিন মেকাপ ক্লাশ করা হয়। যথাযথভাবে শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করনের নিমিত্তে বিভাগীয় প্রধানদের সমন্বয়ে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। উক্ত মনিটরিং টিম শিক্ষা কার্যক্রম তদারকি ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দান করে থাকে।

মূল্যায়ন পদ্ধতি

ছাত্রছাত্রীদের অগ্রগতি মূল্যায়নের জন্য বোর্ড কর্র্তৃক নির্ধারিত ক্লাশ টেষ্ট, কুইজটেষ্ট এবং বর্ষমধ্য পরীক্ষা পরিচালিত হয়। ছাত্রছাত্রীদের হাজিরা ও আচরন ভিত্তিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা রয়েছে। ধারাবাহিক পরীক্ষা এবং চুড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রীদের মেধা তালিকা প্রনয়ন করা হয়। ইহা ছাড়াও শিক্ষকবৃন্দ, ছাত্রছাত্রীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ে থাকেন।

গাইডেন্স এবং কাউন্সিলিং

>ছাত্রছাত্রীদের সার্বিক উন্নতির জন্য তাদের অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রতি শিক্ষকদের অধীনে পাঁচ জন ছাত্রছাত্রীকে ন্যাস্ত করা হয়েছে এবং তাদের লেখাপড়ার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ের প্রতিও বিশেষ ভাবে নজর রাখার দায়িত্ব দ্ওেয়া হয়েছে।

সহশিক্ষা কার্যক্রম

শুধুমাত্র কারিগরী জ্ঞানের গন্ডির মধ্য সীমাবদ্ধ না রেখে ছাত্র ছাত্রীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে প্রতিমাসে এক বার সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা পালন করা হয়। ইহা ছাড়া ও বিতর্ক প্রতিযোগীতা, উপস্থিত বক্ততা ও বিভিন্ন ধরনের আভ্যন্তরিন খেলাধূলার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিবছর জানুয়ারী মাসে প্রতিষ্ঠ্না দিবস উৎযাপন করা হয়। ছাত্র শিক্ষকের স্বতঃফুর্ত অংশগ্রহনের মাধ্যমে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হয়।

সামাজিক অবস্থান

জেলা প্রশাসন ও জেলা পর্যায়ের সরকারী দপ্তর সমূহের সহিত নিবিড় যোগাযোগের কারনে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ এর সামাজিক মর্যাদা পূর্বের তুলনায় বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারী পর্যায়ের সকল সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহনের ফলে সামাজিক মর্যাদা উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উপসংহার

কারিগরী শিক্ষার পাশাপাশি সাধারন শিক্ষার সমন্বয়ে ছাত্রছাত্রীদের আচরন ভিত্তিক পাঠদানের মাধ্যমে আত্বনির্ভরশীল, কর্মক্ষম নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিক্ষক মন্ডলী সদা তৎপর। দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করে জাতীয় দক্ষতা বৃদ্ধিকরনের নিমিত্তে অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারী গন স্বস্ব অবস্থান থেকে নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ভূমিকাঃ

একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ড, দৈনন্দিন উৎপাদন কার্যক্রম এবং প্রযুক্তি গত সকল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে দক্ষ কারিগরদের ভূমিকা অপরিসীম। প্রকৌশল আর প্রযুক্তিগত কর্মকান্ডই বর্তমান সভ্যতার প্রধান চালিকা শক্তি। প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নই জাতীয় উন্নয়নের প্রধান নিয়ামক। বিশেষ করে দ্রুত বিকাশমান প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে দেশ তথা জাতী পিছিয়ে পড়বে আরো পিছনে, যেখানে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে আমাদের আরো দ্রুত এগিয়ে যাবার কথা। বিষয়টি উপলব্ধি করে বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ভিশন ২০২১ ঘোষনা করেছে। আগামী ২০২১ সাল নাগাদ উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর সমৃদ্ধ ও সুখী বাংলাদেশ গড়াই এ ঘোষনার মূল লক্ষ্য।

উন্নতমানের কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষনের মাধ্যমে পেশা ও সেবার মান বৃদ্ধি করা যায়। আমাদের কারিগর দিগকে আগামীদিনের বহুজাতিক কারিগরদের সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। পেশায় টিকে থাকার জন্য তাদের যথোপযুক্ত দক্ষতা যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। জ্ঞান দক্ষতা, প্রক্রিয়া, মানসম্মত কারিগরিও বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে নতুন নতুন প্রযৃক্তির উদ্ভাবন ঘটাতে হবে।

প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় সরকার ঘোষনা করেছেন, সে প্রত্যয় বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন দক্ষ কারিগর।

Sustainable Technology for Digital Bangladesh.

আসলে টেকসই প্রযুক্তি ছাড়া Digital Bangladesh গড়া সম্ভব নয়। আর টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও প্রয়োগের জন্য প্রয়োজন দক্ষ কারিগর।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পূর্ব শর্ত তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন। তথ্য প্রযুক্তি আজ উন্নয়নের বাহন হিসাবে কাজ করছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি Information & communication Technology (ICT) আজ সারা বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে।আমাদের দেশে অনেক মেধাবী সন্তান বিদেশে কম্পিউটার প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিজ্ঞান ভিত্তিক পেশায় দক্ষতা ও সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের চোখের সামনে গত আড়াই দশকের মধ্যে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে কোরিয়া, সিংগাপুর, মালয়শিয়া, থাইল্যান্ড সহ এশিয়ায় কতগুলো দেশ অর্থনৈতিক ভাবে বিশেষ সমৃদ্ধি অর্জন করেছে।

মেধাঘন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত আজ পৃথিবীর মাঝে I T মার্কেট গড়ে তাদের স্থান করে নিয়েছে। শুধুমাত্র কারিগরি জ্ঞান আর পরিকল্পনার অভাবে আমরা তেমন এগোতে পারিনি। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করা সম্ভব। বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজারের এই যুগে টিকে থাকতে হলে আমাদের নাগরিক দিগকে অবশ্যই যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। যোগ্য ও দক্ষ নাগরিক গড়ে তুলতে আমাদিগকে অবশ্যই কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। বিগত শতকের গত বিশ বছরে বিজ্ঞানের নতুন নতুন উদ্ভাবন বিশ্বে নতুন প্রযুক্তি নির্ভর প্রভাব বলয়ের সৃষ্টি করেছে। বর্তমান বিশ্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং সার্থক প্রয়োগের মধ্যেই নিহিত রয়েছে দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি। সর্বাধুনিক তথ্য প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের ফলে পৃথিবী আজ ছোট হয়ে আসছে। বর্তমান বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে দ্রত গতিতে। আজকে যা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে আত্ম প্রকাশ করছে আগামীকাল তার চেয়ে উন্নত প্রযুক্তি তাকে পুরানো করে দিচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি উন্নয়নের নতুন সব দিগন্ত উম্মোচিত করছে।

আমাদের জাতীয় উন্নয়নের ধারাকে ত্বরান্বিত করার জন্য আমাদের বর্তমান ব্যবহৃত প্রযুক্তি আধুনিকরনের মাধ্যমে হালনাগাদ করতে হবে। নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তি আহরন, রপ্ত ও সুষ্ঠ প্রয়োগের মাধ্যমে এর বিকাশ ব্যাপক সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। দেশের প্রয়োজন ও বাস্তবতার ভিত্তিতে ব্যাপক শিল্পায়নসহ আমাদের হালনাগাদ প্রযুক্তি নির্ভর উন্নয়ন কর্মকান্ড গ্রহন করতে হবে। এ কাজে যেমন প্রয়োজন সরকারের নীতি নির্ধারন তেমনি প্রয়োজন দক্ষ কারিগর, প্রয়োজন দক্ষ মানবসম্পদ।

‘দিন বদলের পালা’ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নতুন চেতনায় এদেশের মানুষ উজ্জীবিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন প্রযুক্তিই দিন বদলের প্রধান হাতিয়ার। প্রযুক্তির উৎকর্ষতা দেশের উন্নয়ন নিয়ন্ত্রন করে। টেকসই প্রযুক্তিছাড়া মানসম্মত পন্য তৈরী সম্ভব নয়। মান সম্মত পন্য তৈরী না হলে শুল্ক মুক্ত বাজার সুবিধা কাজে লাগবে না। তথ্য প্রযুক্তির যন্ত্রনাংশের কর রহিত ও ট্যাক্স হলিডে করেও আই সিটির রপ্তানী বৃদ্ধি হয়নি। কারন সঠিক প্রযুক্তি ও যোগ্য দক্ষ জনসম্পদ নাই। আই সিটি থেকে রপ্তানী আয় ভারতের একহাজার ভাগের এক ভাগও নয়। অথচ গত একদশক প্রকৌশল ছাত্ররা পো্রগ্রামিংয়ে চ্যাম্পিয়ানশীপের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে। সুতরাং তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির জন্য সকল স্তরেই প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি। তাই এক্ষেত্রে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাই পারে আই সিটির জন্য দক্ষ জনসম্পদ তৈরী করতে।

দেশের অধিকাংশ কারিগরি পদগুলো দখল করে আছে অদক্ষ চক্রের দখলে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে প্রতিবেশী দেশসমূহ শিল্পোন্নয়নে প্রযুক্তির বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। পৃথিবীর সকল দেশের সরকারই প্রযুক্তি ও (ICT) অাঁকড়ে ধরে উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌছে যাচ্ছে। এর ব্যতিক্রম বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। টেকসই প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতাবল (Capacity) সৃষ্টি করা ও এর ব্যবহার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সঠিক উপায়। জাপান, কোরিয়া, মালয়শিয়াতে শুধুমাত্র কারিগরি ও বৃত্তি মূলক শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে উন্নতির চরম শিখরে পৌছে গেছে। আমরা কেন তাদের ব্যবহৃত মডেল অনুকরণ করব না।

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দিন বদলের কর্মসূচীর সামনে এক বড বাধা।তাই, জাতির স্বার্থে আমলাতান্ত্রিক বিধিবিধান সজহজতর হওয়া আবশ্যক।

ডিজিটাল যন্ত্রপাতির ব্যবহারঃ

ব্যবসা বানিজ্য, শিল্পকারখানা, প্রশাসন ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, কৃষি ব্যবস্থা যাবতীয় বিষয় আজ প্রযুক্তি নির্ভর। প্রতিবেশী দেশগুলি ডিজিটাল যন্ত্রপাতির ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি করে চলেছে। উন্নয়নের সর্বাঙ্গানে ইলেকট্রনিক ব্যবস্থাপনা সংযোজিত হচ্ছে। ই-গভার্নেন্স,ই-কমার্স, ই-এডুকেশন, ই-এগ্রিকালচার প্রতিক্ষেত্রেই প্রয়োজন ডিজিটাল যন্ত্রপাতি। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মাঝারী আয়ের দেশ করা কঠিন। আর এসব ডিজিটাল যন্ত্রপাতির ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজন দক্ষ জনসম্পদ। যার উৎপাদনের কারখানা হচ্ছে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা।

ব্যবসা বানিজ্য পরিচালনা , সরকারী সেবা প্রদান, দুর্নীতি ও অদক্ষতা নির্নয়ে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষ ভূমিকা রাখে। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রশাসন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা অর্জন করা যায়। পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন আশাব্যঞ্জক নয়। ইন্টারনেট, কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনের সঠিক ও বহুল ব্যবহার অপরিহার্য। এদেশে Internet ব্যবহার কারীর সংখ্যা এখনও শতকরা একভাগের নীচে। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী কম্পিউটার ছুয়েও দেখেনি। ডিজিটাল পদ্ধতির অন্যতম উপাদান ওয়েবসাইট যার ব্যবহার বাংলাদেশে নগন্য। কারন, প্রযুক্তিকে তারা ভয় পায়। প্রযুক্তি সম্পর্কে সাধারন জ্ঞানও তাদের নাই। তাই দেশের সকল মানুষকে এ কাজে সম্পৃক্ত করতে তাদেরকে অবশ্যই কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা অথবা প্রশিক্ষন দিতে হবে।

বিশ্বে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য জেনেভাতে অনুষ্ঠিত হলো WTO (World Trade Organigation) সম্মেলন।শুল্কমুক্ত পন্য রপ্তানি ও শ্রমবাজারে শ্রমিক নিয়োগ বাংলাদেশের জন্য জরুরী, যা সেখানে বলিষ্ঠ কণ্ঠে উথাপিত হয়েছে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাদানের মাধ্যমে দক্ষ জনসম্পদ তৈরী করে বিশ্বের শ্রমবাজার বিশেষ করে (ICT)- এর বাজার দখল করা সম্ভব।

WFEO (World Federation of Engineers Organization) কুয়েত ঘোষনাু ২০০৯ – এ নিজস্ব প্রযুক্তি, জনশক্তি ও সম্পদ ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ছাড়া দক্ষ জনসম্পদ তৈরী করা যায় না।

প্রযুক্তির জীবন চক্র ছোট হয়ে (life cycle) যাচ্ছে। আজকের প্রযুক্তি কাল out dated হচ্ছে। out dated প্রযুক্তি ব্যবহার করলে উৎপাদিত পন্য মানসম্মত থাকবে না। পন্য মানসম্মত না হলে বাজার জাত করা কঠিন হবে। বিদেশী প্রযুক্তির উপর নির্ভর করলে উৎপাদিত পন্যের দাম বেড়ে যাবে। কাজেই নিজস্ব প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কোন বিকল্প নেই। উন্নত দেশগুলো এ কাজটি দক্ষতার সাথে করে যাচ্ছে। যেমন আমেরিকাতে প্রতিবৎসরই একটা নতুন মডেলের কম্পিউটার বাজারে আসছে।

কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষকদের প্রতিনিয়ত Updated Technology এর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে Training দিয়ে Updated রাখতে হবে।

তথ্য প্রযুক্তির থেকে সুপল পেতে হলে দেশের সকল পেশার মানুষ প্রযুক্তিগত জ্ঞান প্রয়োজন। প্রতিটি বিদ্যালয়, মাদ্রাসায় অবশ্যই কারিগরি বিষয় সংযোজন করা আবশ্যক। সাধারন মানুষ টেকসই প্রযুক্তির বাহক না হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ তাৎপর্যপূর্ণ হবে না।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্ম্মানের সবচেয়ে স্পর্সকাতর ও সংবেদনশীল সেক্টর হলো বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ- এ সকল কাজই অতি কারিগরি সংশ্লিষ্ট। ভবিষ্যৎ সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রনয়ন, পরিচালন ও সংরক্ষনে কারিগরি ও বূত্তিমূলক গ্রাজুয়েটদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

হিউম্যান পোভার্টি ইনডেক্স (HPI) কে সাধারনত উন্নয়ন ও অগ্রগতির মাপকাঠি ধরা হয়। বাংলাদেশে এ ইনডেক্সের মান ১৫ শতাংশের নিচে থাকা বাঞ্চনীয়। কৃষির পাশাপাশি টেকসই প্রযুক্তির প্রয়োগ ও শিল্পের বিকাশ প্রভার্টি ইনডেক্স কমানোর উত্তম পন্থা। ছোট ও মাঝারী শ্রেণীর শিল্প কারখানা বাংলাদেশের জন্য উপযোগী। শিল্প কারখানা উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি প্রয়োজন দক্ষ ও শিক্ষিত জনশক্তি। কারিগরি বৃত্তিমূলক শিক্ষাই পারে দক্ষ জনশক্তি তৈরী করতে।

অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ হওয়ায় এদেশের ICT- এর বিকাশ ঘটেছে।প্রতিবেশী দেশ ভারত আধুনিক প্রযুক্তি ওয়াইম্যাক্স ব্যবহার না করলেও বাংলাদেশ আগামী ফেব্রুয়ারী মাস থেকে ওয়াইম্যাক্স ব্যবহার করতে যাচ্ছে। যার মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটবে। সে বিপ্লবের জন্য প্রয়োজন হবে অনেক দক্ষ জনশক্তি। তাই, কারিগরি বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে দক্ষ জনশক্তি গডে তুলতে হবে।

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়,আমাদের শুধুমাত্র গামেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে ১৭৫০০ জন বিদেশী এক্রপার্টলোক কাজ করে। সত্যই, সেলুকাস! বিচিত্র এদেশ! বিদেশ থেকে বেশী বেতন দিয়ে এক্সপার্ট না এনে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার মান বৃদ্ধি করে নিজস্ব এক্সপার্ট গড়ে তোলা দরকার। এজন্য কারিগরি শিক্ষকদের আধুনিক প্রযুক্তির উপর প্রশিক্ষন দেওয়া আবশ্যক।

স্বাধীনতার ৩৯ বৎসর পেরিয়ে গেলেও আমরা জ্ঞান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে কাঙ্খিত সাফল্য অর্জন করতে পারি নাই। বিপুল অর্থ ব্যয়ে রচিত আটটি শিক্ষানীতি আলোর মুখ দেখে নি।

শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন ‘‘প্রচলিত ও গতানুগতিক শিক্ষা দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না। আধুনিক, যুগোপযোগী ও প্রযুক্তি সমৃদ্ধ শিক্ষায় শিক্ষিত করে নব প্রজন্মকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ষ্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। সুপরিকল্পিত কোন শিক্ষানীতি ছিল না। বর্তমান সরকার যে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে, তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের সকল নাগরিককে জ্ঞান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানে সমৃদ্ধ করতে হবে।’’শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আরো বলেন, ‘‘বাঙ্গালী জাতির জন্য স্বাধীনতা ছিল বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ অর্জন। স্বাধীনতার লক্ষ্য বাস্তবায়নে আধুনিক শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে দক্ষ ও যোগ্য নব প্রজন্ম গড়ে তোলা জাতির জন্য আজ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সুযোগ বঞ্চিত দেশপ্রেমিক জনগণ এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সম গৌরবে গোরবান্বিত রোধ করতে পারেন।’’

অবস্থান

প্রখ্যাত লেখক মীর মোশাররফ হোসেনের জন্মভূমি রাজবাড়ী জেলার প্রানকেন্দ্র সজ্জনকান্দা এলাকায় রাজবাড়ী জেলার একমাত্র কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজবাড়ী সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ অবস্থিত। উত্তরপার্শ্বে রাজবাড়ী আধুনিক সদর হাসপাতাল, রাজবাড়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী মহিলা কলেজ অবস্থিত। দক্ষিন পার্শ্বে আবুল হোসেন ডিগ্রি কলেজ, পশ্চিমে জনস্বার্থ প্রকৌশল অধিদপ্তর, সিভিল সার্জন কার্যালয় অবস্থিত এবং পূর্বদিকে দুইটি নিু মাধ্যমিক স্কুল অবস্থিত। রাজধানী ঢাকা শহর থেকে বাসযোগে পাটুরিযা -দৌলতদিয়া পার হয়ে সহজেই এখানে আসা যায়।

আয়তনঃ

চুর্তদিকে প্রাচীর বেষ্টিত ৪.১৬ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত।

অবকাঠামো

দোতলা একাডেমিক ভবন যাহার প্রতি তলায় চারটি করিয়া রুম রহিয়াছে। ছাত্রছাত্রীদের শ্রেনী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ০৪ রুম বিশিষ্ট ০১ টি টিনশেড সেমি পাকা বিল্ডিং, ০২ টি বিশাল ওয়ার্কশপ (পাকা দালান), ০১ টি বিজ্ঞানাগার, ০৪ রুম বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন, ০১ টি লাইব্রেরী ও একটি প্রধান স্টোর রহিয়াছে। ইহা ছাড়াও অত্র প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় টয়লেট, বাথরুম নির্মান করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে একটি আবাসিক ষ্ট্যাফ কোয়াটার (০৪ ফ্লাট বিশিষ্ট) এবং একটি পরিত্যাক্ত সুপারিনটেনডেন্ট কোয়াটার রহিয়াছে।

পাঠদান পদ্ধতি

অত্র প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক বৃন্দ উচ্চ শিক্ষিত এবং বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষন প্রাপ্ত। কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের প্রণীত প্রবিধান অনুযায়ী শ্রেনী কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কারিগরী শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষক কর্র্তৃক প্রস্তুুতকৃত মডেল ও অন্যান্য উপকরনাদির সমন্বয়ে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ক্লাশ পরিচালনা করা হয়। অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছাত্রছাত্রীদের মানোন্নয়ের জন্য সপ্তাহে ০১ দিন মেকাপ ক্লাশ করা হয়। যথাযথভাবে শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করনের নিমিত্তে বিভাগীয় প্রধানদের সমন্বয়ে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। উক্ত মনিটরিং টিম শিক্ষা কার্যক্রম তদারকি ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দান করে থাকে।

মূল্যায়ন পদ্ধতি

ছাত্রছাত্রীদের অগ্রগতি মূল্যায়নের জন্য বোর্ড কর্র্তৃক নির্ধারিত ক্লাশ টেষ্ট, কুইজটেষ্ট এবং বর্ষমধ্য পরীক্ষা পরিচালিত হয়। ছাত্রছাত্রীদের হাজিরা ও আচরন ভিত্তিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা রয়েছে। ধারাবাহিক পরীক্ষা এবং চুড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রীদের মেধা তালিকা প্রনয়ন করা হয়। ইহা ছাড়াও শিক্ষকবৃন্দ, ছাত্রছাত্রীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ে থাকেন।

গাইডেন্স এবং কাউন্সিলিং

>ছাত্রছাত্রীদের সার্বিক উন্নতির জন্য তাদের অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রতি শিক্ষকদের অধীনে পাঁচ জন ছাত্রছাত্রীকে ন্যাস্ত করা হয়েছে এবং তাদের লেখাপড়ার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ের প্রতিও বিশেষ ভাবে নজর রাখার দায়িত্ব দ্ওেয়া হয়েছে।

সহশিক্ষা কার্যক্রম

শুধুমাত্র কারিগরী জ্ঞানের গন্ডির মধ্য সীমাবদ্ধ না রেখে ছাত্র ছাত্রীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে প্রতিমাসে এক বার সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা পালন করা হয়। ইহা ছাড়া ও বিতর্ক প্রতিযোগীতা, উপস্থিত বক্ততা ও বিভিন্ন ধরনের আভ্যন্তরিন খেলাধূলার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিবছর জানুয়ারী মাসে প্রতিষ্ঠ্না দিবস উৎযাপন করা হয়। ছাত্র শিক্ষকের স্বতঃফুর্ত অংশগ্রহনের মাধ্যমে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হয়।

সামাজিক অবস্থান

জেলা প্রশাসন ও জেলা পর্যায়ের সরকারী দপ্তর সমূহের সহিত নিবিড় যোগাযোগের কারনে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ এর সামাজিক মর্যাদা পূর্বের তুলনায় বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারী পর্যায়ের সকল সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহনের ফলে সামাজিক মর্যাদা উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উপসংহার

কারিগরী শিক্ষার পাশাপাশি সাধারন শিক্ষার সমন্বয়ে ছাত্রছাত্রীদের আচরন ভিত্তিক পাঠদানের মাধ্যমে আত্বনির্ভরশীল, কর্মক্ষম নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিক্ষক মন্ডলী সদা তৎপর। দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করে জাতীয় দক্ষতা বৃদ্ধিকরনের নিমিত্তে অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারী গন স্বস্ব অবস্থান থেকে নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ভূমিকাঃ

একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ড, দৈনন্দিন উৎপাদন কার্যক্রম এবং প্রযুক্তি গত সকল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে দক্ষ কারিগরদের ভূমিকা অপরিসীম। প্রকৌশল আর প্রযুক্তিগত কর্মকান্ডই বর্তমান সভ্যতার প্রধান চালিকা শক্তি। প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নই জাতীয় উন্নয়নের প্রধান নিয়ামক। বিশেষ করে দ্রুত বিকাশমান প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে দেশ তথা জাতী পিছিয়ে পড়বে আরো পিছনে, যেখানে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে আমাদের আরো দ্রুত এগিয়ে যাবার কথা। বিষয়টি উপলব্ধি করে বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ভিশন ২০২১ ঘোষনা করেছে। আগামী ২০২১ সাল নাগাদ উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর সমৃদ্ধ ও সুখী বাংলাদেশ গড়াই এ ঘোষনার মূল লক্ষ্য।

উন্নতমানের কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষনের মাধ্যমে পেশা ও সেবার মান বৃদ্ধি করা যায়। আমাদের কারিগর দিগকে আগামীদিনের বহুজাতিক কারিগরদের সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। পেশায় টিকে থাকার জন্য তাদের যথোপযুক্ত দক্ষতা যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। জ্ঞান দক্ষতা, প্রক্রিয়া, মানসম্মত কারিগরিও বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে নতুন নতুন প্রযৃক্তির উদ্ভাবন ঘটাতে হবে।

প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় সরকার ঘোষনা করেছেন, সে প্রত্যয় বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন দক্ষ কারিগর।

Sustainable Technology for Digital Bangladesh.

আসলে টেকসই প্রযুক্তি ছাড়া Digital Bangladesh গড়া সম্ভব নয়। আর টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও প্রয়োগের জন্য প্রয়োজন দক্ষ কারিগর।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পূর্ব শর্ত তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন। তথ্য প্রযুক্তি আজ উন্নয়নের বাহন হিসাবে কাজ করছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি Information & communication Technology (ICT) আজ সারা বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে।আমাদের দেশে অনেক মেধাবী সন্তান বিদেশে কম্পিউটার প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিজ্ঞান ভিত্তিক পেশায় দক্ষতা ও সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের চোখের সামনে গত আড়াই দশকের মধ্যে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে কোরিয়া, সিংগাপুর, মালয়শিয়া, থাইল্যান্ড সহ এশিয়ায় কতগুলো দেশ অর্থনৈতিক ভাবে বিশেষ সমৃদ্ধি অর্জন করেছে।

মেধাঘন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত আজ পৃথিবীর মাঝে I T মার্কেট গড়ে তাদের স্থান করে নিয়েছে। শুধুমাত্র কারিগরি জ্ঞান আর পরিকল্পনার অভাবে আমরা তেমন এগোতে পারিনি। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করা সম্ভব। বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজারের এই যুগে টিকে থাকতে হলে আমাদের নাগরিক দিগকে অবশ্যই যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। যোগ্য ও দক্ষ নাগরিক গড়ে তুলতে আমাদিগকে অবশ্যই কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। বিগত শতকের গত বিশ বছরে বিজ্ঞানের নতুন নতুন উদ্ভাবন বিশ্বে নতুন প্রযুক্তি নির্ভর প্রভাব বলয়ের সৃষ্টি করেছে। বর্তমান বিশ্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং সার্থক প্রয়োগের মধ্যেই নিহিত রয়েছে দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি। সর্বাধুনিক তথ্য প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের ফলে পৃথিবী আজ ছোট হয়ে আসছে। বর্তমান বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে দ্রত গতিতে। আজকে যা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে আত্ম প্রকাশ করছে আগামীকাল তার চেয়ে উন্নত প্রযুক্তি তাকে পুরানো করে দিচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি উন্নয়নের নতুন সব দিগন্ত উম্মোচিত করছে।

আমাদের জাতীয় উন্নয়নের ধারাকে ত্বরান্বিত করার জন্য আমাদের বর্তমান ব্যবহৃত প্রযুক্তি আধুনিকরনের মাধ্যমে হালনাগাদ করতে হবে। নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তি আহরন, রপ্ত ও সুষ্ঠ প্রয়োগের মাধ্যমে এর বিকাশ ব্যাপক সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। দেশের প্রয়োজন ও বাস্তবতার ভিত্তিতে ব্যাপক শিল্পায়নসহ আমাদের হালনাগাদ প্রযুক্তি নির্ভর উন্নয়ন কর্মকান্ড গ্রহন করতে হবে। এ কাজে যেমন প্রয়োজন সরকারের নীতি নির্ধারন তেমনি প্রয়োজন দক্ষ কারিগর, প্রয়োজন দক্ষ মানবসম্পদ।

‘দিন বদলের পালা’ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নতুন চেতনায় এদেশের মানুষ উজ্জীবিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন প্রযুক্তিই দিন বদলের প্রধান হাতিয়ার। প্রযুক্তির উৎকর্ষতা দেশের উন্নয়ন নিয়ন্ত্রন করে। টেকসই প্রযুক্তিছাড়া মানসম্মত পন্য তৈরী সম্ভব নয়। মান সম্মত পন্য তৈরী না হলে শুল্ক মুক্ত বাজার সুবিধা কাজে লাগবে না। তথ্য প্রযুক্তির যন্ত্রনাংশের কর রহিত ও ট্যাক্স হলিডে করেও আই সিটির রপ্তানী বৃদ্ধি হয়নি। কারন সঠিক প্রযুক্তি ও যোগ্য দক্ষ জনসম্পদ নাই। আই সিটি থেকে রপ্তানী আয় ভারতের একহাজার ভাগের এক ভাগও নয়। অথচ গত একদশক প্রকৌশল ছাত্ররা পো্রগ্রামিংয়ে চ্যাম্পিয়ানশীপের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে। সুতরাং তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির জন্য সকল স্তরেই প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি। তাই এক্ষেত্রে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাই পারে আই সিটির জন্য দক্ষ জনসম্পদ তৈরী করতে।

দেশের অধিকাংশ কারিগরি পদগুলো দখল করে আছে অদক্ষ চক্রের দখলে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে প্রতিবেশী দেশসমূহ শিল্পোন্নয়নে প্রযুক্তির বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। পৃথিবীর সকল দেশের সরকারই প্রযুক্তি ও (ICT) অাঁকড়ে ধরে উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌছে যাচ্ছে। এর ব্যতিক্রম বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। টেকসই প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতাবল (Capacity) সৃষ্টি করা ও এর ব্যবহার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সঠিক উপায়। জাপান, কোরিয়া, মালয়শিয়াতে শুধুমাত্র কারিগরি ও বৃত্তি মূলক শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে উন্নতির চরম শিখরে পৌছে গেছে। আমরা কেন তাদের ব্যবহৃত মডেল অনুকরণ করব না।

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দিন বদলের কর্মসূচীর সামনে এক বড বাধা।তাই, জাতির স্বার্থে আমলাতান্ত্রিক বিধিবিধান সজহজতর হওয়া আবশ্যক।

ডিজিটাল যন্ত্রপাতির ব্যবহারঃ

ব্যবসা বানিজ্য, শিল্পকারখানা, প্রশাসন ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, কৃষি ব্যবস্থা যাবতীয় বিষয় আজ প্রযুক্তি নির্ভর। প্রতিবেশী দেশগুলি ডিজিটাল যন্ত্রপাতির ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি করে চলেছে। উন্নয়নের সর্বাঙ্গানে ইলেকট্রনিক ব্যবস্থাপনা সংযোজিত হচ্ছে। ই-গভার্নেন্স,ই-কমার্স, ই-এডুকেশন, ই-এগ্রিকালচার প্রতিক্ষেত্রেই প্রয়োজন ডিজিটাল যন্ত্রপাতি। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মাঝারী আয়ের দেশ করা কঠিন। আর এসব ডিজিটাল যন্ত্রপাতির ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজন দক্ষ জনসম্পদ। যার উৎপাদনের কারখানা হচ্ছে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা।

ব্যবসা বানিজ্য পরিচালনা , সরকারী সেবা প্রদান, দুর্নীতি ও অদক্ষতা নির্নয়ে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষ ভূমিকা রাখে। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রশাসন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা অর্জন করা যায়। পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন আশাব্যঞ্জক নয়। ইন্টারনেট, কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনের সঠিক ও বহুল ব্যবহার অপরিহার্য। এদেশে Internet ব্যবহার কারীর সংখ্যা এখনও শতকরা একভাগের নীচে। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী কম্পিউটার ছুয়েও দেখেনি। ডিজিটাল পদ্ধতির অন্যতম উপাদান ওয়েবসাইট যার ব্যবহার বাংলাদেশে নগন্য। কারন, প্রযুক্তিকে তারা ভয় পায়। প্রযুক্তি সম্পর্কে সাধারন জ্ঞানও তাদের নাই। তাই দেশের সকল মানুষকে এ কাজে সম্পৃক্ত করতে তাদেরকে অবশ্যই কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা অথবা প্রশিক্ষন দিতে হবে।

বিশ্বে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য জেনেভাতে অনুষ্ঠিত হলো WTO (World Trade Organigation) সম্মেলন।শুল্কমুক্ত পন্য রপ্তানি ও শ্রমবাজারে শ্রমিক নিয়োগ বাংলাদেশের জন্য জরুরী, যা সেখানে বলিষ্ঠ কণ্ঠে উথাপিত হয়েছে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাদানের মাধ্যমে দক্ষ জনসম্পদ তৈরী করে বিশ্বের শ্রমবাজার বিশেষ করে (ICT)- এর বাজার দখল করা সম্ভব।

WFEO (World Federation of Engineers Organization) কুয়েত ঘোষনাু ২০০৯ – এ নিজস্ব প্রযুক্তি, জনশক্তি ও সম্পদ ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ছাড়া দক্ষ জনসম্পদ তৈরী করা যায় না।

প্রযুক্তির জীবন চক্র ছোট হয়ে (life cycle) যাচ্ছে। আজকের প্রযুক্তি কাল out dated হচ্ছে। out dated প্রযুক্তি ব্যবহার করলে উৎপাদিত পন্য মানসম্মত থাকবে না